1. admin@chattogramvoice.com : CbCvVcgr :
  2. admin@facfltd.com : facfltd :
  3. editior@chattogramvoice.com : FormanchYtv :
সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫, ১২:২৬ পূর্বাহ্ন

স্বজনের আর্তনাদে হৃদয়ে দাগ কাটা “সুজন” ছুটছে মানবতার কল্যাণে

নিজস্ব প্রতিবেদক,চট্টগ্রাম:
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ১৯০ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক,চট্টগ্রাম:

সুজন মধ্যবিত্ত পরিবারের এক মেধাবী ছাত্র, পারিবারিক বিভিন্ন টানাপোড়ন, অসচ্ছলতা সুজনকে খুব ভাবাতো,তারপরও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হতো। অষ্টম শ্রেণীতে উঠার পর ওর এক আত্নীয়ের ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে, ফলে কিছু দিন পর পর রক্ত দিতে হত। মানুষ এখনকার মত আগে তেমন সচেতন ছিল না, এক ব্যাগ রক্ত জোগাড় করা খুবই কঠিন কাজ ছিল তখন।  যারা দিত তারাও চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় থাকত, সুজন ডাইরি মেইনটেইন করতো সেই সময় তারমধ্যে শুরু করল কার রক্তের গ্রুপ কি?কে, কখন,কোথায়, কোন সময়,কত দিন পূর্বে রক্ত দিয়েছেন? তার সঠিক তথ্য নিতেন, যখন কারো রক্তের প্র‍য়োজন হত রক্তদাতার কাছে খবর নিয়ে যাবার জন্য সহকর্মী  আরিফের সাইকেলটা নিয়ে যেতেন, তখন মোবাইল ফোন যত্রতত্র বা সবার কাছে ছিল না, ধীরে ধীরে সুজনের আত্নীয় টা শরীর খারাপের দিকে যেতে লাগল কারণ রক্ত ঠিক মত দেয়া যাচ্ছিল না, রক্ত দাতা যথাসময়ে পাওয়াটা কঠিন হয়ে পরল, এই ব্যপারটি সুজন কে খুবই দুচিন্তায় ফেলে দিল কারণ সুজন ছাড়া ওর আত্নীয়ের তেমন নির্ভরযোগ্য কেউ নেই, মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান টিউশন করে পড়ালেখা করা, রক্ত জোগাড় করা, নিজের পরিবারের দেখাশুনা করা সব মিলিয়ে বেহাল এক অবস্থায় পড়ল সে, কিছুদিন পর সুজনের সেই আত্নীয় মারা গেলেন সঠিক চিকিৎসা ও যথা সময়ে রক্ত না দেওয়ার কারণে, এরপর সুজন নিজে রক্ত দেয়া শুরু করল এবং পাড়ার কয়েকজন ছেলে মিলে একটা লিস্ট তৈরী করল কার রক্তের গ্রুপ কি এবং রক্ত দেয়ার সময় কাল, সে দীর্ঘদিন আগের কথা, এখন সে মোটামুটি ভাল অবস্থানে আছে, ভাল মানের একজন স্বেচ্ছাসেবক, প্রায় ২০০ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে কাজ করে দেশের বিভিন্ন সামাজিক কাজে, কিছুদিন আগে দিনাজপুর থেকে এক মাঝবয়সী মহিলা আসল এবং কান্নাকাটি করে বল্ল বাবা আরতো পারি না, আমার নাতি টার থ্যালাসেমিয়া কিছুদিন পর পর রক্ত দিতে হয়, রক্তদাতা পাই কিন্ত রক্ত নেয়ার যে খরচ তা তো ব্যবস্থা করতে পারি না, রীতিমতো ক্লান্ত, কোন উপায় না দেখে সে মহিলা কে প্রতিনিয়ত নাম মাত্র খরচে রক্ত নেয়ার / দেয়ার ব্যবস্থা করে দিল, রফিক নামে সুজনের এক বন্ধু ছিল সেও মধ্যবিত্ত পরিবারের সে স্মৃতিচারণ করছিল তার জীবনের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার তিক্ত অভিজ্ঞতা, আমরা আসলে কখনো চিন্তাও করিনি একজন স্বেচ্ছাসেবক কিভাবে নিজের কাজের মাঝখানে বা কাজ ফেলে মানুষের উপকারের জন্য উঠেপড়ে লাগে, এক ব্যাগ রক্ত জোগাড় করাটা কত কঠিন, কত জন কে ফোন করতে হয়, অনেক সময় দেখা যায় একটা ফোন এল রাত ১.৩০ মিনিটে একজন এক্সিডেন্ট করা রোগীর জন্য জরুরী বি নেগেটিভ রক্ত প্রয়োজন সেটা বলে অপরপ্রান্তের লোক ফোন কেটে দিল এইদিকে যে স্বেচ্ছাসেবক কে ফোন করেছে তার মোবাইলে টাকা নেই, পকেটেও টাকা নেই, কঠিন এই মুহুর্তে নিজেকে খুব অসহায় মনে হয় এবং সৃষ্টিকর্তার দিকে দুহাত তুলে নিজের অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করে দু চোখের পানি ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না, এমনও অনেক সময় হয়েছে একজন স্বেচ্ছাসেবক ভাই কোন সামাজিক কাজে গেছে যেখানে গেছে ওদের অসহায়ত্বের ব্যপারটি বিবেচনা করে পকেটে যা ছিল দিয়ে হেটে হেটে বাসায় এসেছে, পৃথিবীতে প্রত্যেকটা কাজের বিনিময়ে আছে একমাত্র স্বেচ্ছাসেবী ছাড়া, একজন স্বেচ্ছাসেবক কত বড় মাপের বা কত বড় মন হয় তা একমাত্র উপকার ভোগীরাই জানেন, আমাদের সমাজে সাধারণত মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরাই স্বেচ্ছাসেবী জগতে বেশি আশে, কিছু একটা করতে চাইলেই আমাদের সমাজের কথিত কিছু লোক বলে ওর কি দরকার এটা করার, ওটা করার, সমাজে আর লোক নেই, দায়িত্ব কি শুধু ওর একার, তখন আমাদের মত স্বেচ্ছাসেবী রা নিরুৎসাহিত ও অপমানিত হয়, মাঝে মধ্যে সিদ্ধান্ত নেই কি দরকার এত অপমান, উপেক্ষা, অপেক্ষা সহ্য করে নিজেকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে গড়ে তোলা, আরো অনেক মানুষ আছে, এটা শুধু আমার একার দায়িত্ব নয়, এবং এভাবে কালের আবহে হারিয়ে যায় হাজারো স্বেচ্ছাসেবী, সমাজের উচিত, স্বেচ্ছাসেবী দের সম্মানিত করা, ছোটখাট কাজে পুরস্কৃত করা, সম্মাননা দেয়া, তবেই তৈরী হবে লাখো স্বেচ্ছাসেবী, আমরা দেখেছি মিডলইস্টে ও বিভিন্ন মহাদেশে স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে, মহান সৃষ্টিকর্তাও বলেছেন হে মানব জাতী তোমাদের কে আমার প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছি, তোমরা আমার ইবাদাত কর এবং মানব কল্যাণে কাজ কর, তোমরা জনহিতকর কাজের মাধ্যমে, আমার সৃষ্টিকুল কে ভালোবাসার মাধ্যমে আমাকে পাবে, বিভিন্ন ধর্মেও মানব কল্যাণে কাজ করাকে উৎসাহিত করা হয়েছে, আজ ৫ ডিসেম্বর বিশ্ব স্বেচ্ছাসেবী দিবস, আজকের এই দিনে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি সেসব স্বেচ্ছাসেবী দের যারা নিজের মূল্যবান সময় ও অর্থ ব্যয় করে স্বপ্ন দেখে এক মানবিক বাংলাদেশের, আসুন মানবিক হয়, মানুষ হয়ে বাচিঁ, মানুষের জন্য বাচিঁ, স্বেচ্ছাসেবী তৈরী তে নিজেদের পরিবার কে উৎসাহিত করি, স্বেচ্ছাসেবীরা হারিয়ে গেলে ক্রমান্বয়ে এই পৃথিবীটা অমানবিক হয়ে যাবে, সাধারণ মানুষ খুব কষ্টে পড়বে, কে কি বলছে তা কর্ণপাত না করে মহান সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্টি করার জন্য কাজ করি, মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি আন্তরিক হই।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

© All rights reserved © 2021
Theme Customized By LiveTV