নিজস্ব প্রতিবেদক,চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে “বেসরকারী স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান কর্মচারী ইউনিয়ন”এর বিভিন্ন দাবি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সভাপতি মোঃ আব্দুর রহিম। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আপনারা জানেন সারা দেশে বেসরকারী স্বাস্থ্য খাতে প্রচুর হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। বিগত ৪ দশক ধরে সরকারী হাসপাতাল, ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের পাশাপাশি বেসরকারী এই সেক্টর দেশের মোট জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ জনগণকে সেবা দিয়ে
যাচ্ছে। দেশী বিদেশী প্রচুর বিনিয়োগও আকৃষ্ট হচ্ছে এই সেক্টরে। দিন দিন নতুন নতুন কর্পোরেট হাউজের বিনিয়োগ ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে। জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে এই ব্যবসা। সারা দেশে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কর্মচারী জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করছে এই স্বাস্থ্য সেক্টরে। বৈশ্বয়িক করোনা মহামারীর সময়ে পায়ে হেটে কর্মস্থলে এসে দিনরাত পরিবার পরিজন ছেড়ে কাজ
করে গেছে। সরকারী বেসরকারী কোন কর্তৃপক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আমাদের সঠিক মূল্যায়ন হয়নি ।
অথচ কাজ করতে গিয়ে আমরা আমাদের অনেক সহকর্মীকে হারিয়েছি। মৃত্যুর পর ক্ষতিপূরণ পর্যন্ত পায়নি। অনেক সহকর্মীকে করোনা পরবর্তীতে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে। তাদের চাকুরীর অবসানজনিত ক্ষতিপূরণ ও প্রদান করেননি। এই সেক্টরের শ্রমিক কর্মচারীরা বছরের পর বছর কাজ করলেও মাসিক বেতন ৪/৫ হাজার টাকা। আপনারা জানেন বিগত কয়েক বছর ধরে জিনিস পত্রের দাম কয়েকগুন বেড়েছে। আপনারা
নিজেরাও ভুক্তভোগী। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসসহ গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, বাড়ী ভাড়া, গাড়ীভাড়া ইত্যাদি কয়েক গুন বেড়েছে। এমতাবস্থায় এই বেতনে কি এক সপ্তাহ চলা সম্ভব? লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কর্মচারীরা সকল প্রকার আইনী অধিকার ও ন্যার্য্য মজুরী থেকে বঞ্চিত। দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সরকার তথা শ্রম মন্ত্রানলয়ের কাছে নিন্মতম মজুরী বোর্ড গঠনের দাবীতে
মিছিল, সমাবেশ, মানবন্ধন করলেও পাঁচ বছরেও এই সেক্টরে নিম্নতম মজুরী বোর্ড গঠন করা হয়নি।
ইউনিয়নের পক্ষ থেকে মাননীয় শ্রম প্রতিমন্ত্রী, মাননীয় শ্রম সচিব সহ চট্টগ্রাম কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে স্মারক লিপি দেয়া হয়েছে। ইউনিয়নের দাবীর প্রেক্ষিতে বিগত এক বছরের বেশি সময় আগে শ্রম মন্ত্রনালয় বেসরকারী স্বাস্থ্য সেক্টরসহ ১৪টি সেক্টরে মজুরী বোর্ড গঠনের জন্য
চট্টগ্রামের কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মাধ্যমে ইউনিয়নের প্রতিনিধির তালিকা পাঠানোর জন্য চিঠি প্রদান করে। সেই অনুযায়ী আমাদের ইউনিয়নের তিনজন প্রতিনিধির নাম মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হলেও মালিক পক্ষের অসহযোগিতার কারণে এখনও পর্যন্ত নিম্নতম মজুরী বোর্ড
গঠন করা হয়নি। ফলে এ সেক্টরের লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কর্মচারীরা প্রশাসন, মালিকপক্ষের কাছে জিম্মির
জীবন যাপন করছে। নিম্নতম মজুরী বোর্ড না থাকায় হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার
গুলোতে যে যার মত বেতন মজুরী প্রদান করছেন।
বাংলাদেশের প্রচলিত বিদ্যমান শ্রম আইন ও শ্রম বিধি থাকলেও হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের মালিক পক্ষ মানা বাধ্যতামূলক হলেও তাঁরা এ আইনের কোন তোয়াক্কাই করেন না। শ্রম আইন অনুযায়ী প্রত্যেক শ্রমিক কর্মচারী নিয়োগপত্র, চাকুরীতে যোগাদানের তারিখ উল্লেখ করে
পরিচয়পত্র, সার্ভিসবুক মালিক কর্তৃপক্ষ প্রদান করা বাধ্যতামূলক।
প্রত্যেক শ্রমিক-কর্মচারী ৮ ঘন্টার অধিক কাজ করলে অতিরিক্ত কাজের জন্য শ্রম আইন অনুযায়ী দ্বিগুন বেতন দেয়ার কথা। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে ওভার টাইমের নামে সিংগেল বেতন প্রদান করলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ১৩/১৪ ঘন্টা কাজ করিয়ে কোন ওভার টাইম ভাতা প্রদান করেন না। সবেতন সাপ্তহিক ছুটি ছাড়াও ১০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি, ১৪ দিন পীড়া ছুটি, ১১ দিন উৎসব ছুটি, প্রতি ১৮ দিন কার্য দিবসের জন্য ১ দিন অর্জিত ছুটি বছরে প্রাপ্য এবং নারী শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য ৪ মাস মাতৃত্বকালীন ছুটিও মালিক কর্তৃপক্ষ প্রদান করেন না। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় কোন শ্রমিক কোন কারণে কর্মস্থলে একদিন অনুপস্থিত থাকলে অথবা দেরীতে আসলে তিন দিনের বেতন কেটে নেয়া
হয়। সাধারণ শ্রমিকদের মত সকল সুযোগ সুবিধা পাওয়ার অধিকার যখন তখন মৌখিক চাকুরীচ্যুত করা এই সব প্রতিষ্ঠানে নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। কোন ধরণের সার্ভিস বেনিফিট বা আত্মপক্ষ সমর্থনের
সুযোগ কর্মীদের দেওয়া হয় না। ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত চাকুরী করা বছরে ২ টি বোনাস, প্রভিডেন্ট
ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, কেন্টিন সুবিধা ১০০ জনের অধিক শ্রমিক কর্মরত থাকলে বীমা সুবিধা ও পারিবারিক চিকিৎসা দূরের কথা শ্রমিক অসুস্থ হলে কোন ধরনের চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করেন না, দুর্ঘটনায় চিকিৎসা ছুটি, ক্ষতিপূরণ কিছুই দেওয়া হয়না। বছর শেষে ৫% মজুরী বৃদ্ধি (বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট)
কোথাও কার্যকর হয় না। প্রফিট বোনাস, পার্টিসিফেশন ফান্ড (অংশীদারীত্ব তহবিল) না দিয়ে বছরের পর বছর পার করা, সার্ভিস চার্জের কোন অংশ শ্রমিকদের না দেয়া ইত্যাদি শ্রম আইন বিরোধী তৎপরতা বছরের পর বছর চলছে। এসমস্ত ব্যাপারে চট্টগ্রামে শ্রম মন্ত্রনালয়ের দুইটি দপ্তর থাকলেও তাদের কোন তৎপরতা চোখে পড়ে না।
কর্মক্ষেত্রে শ্রমিক কর্মচারীদের সাথে অশালীন ভাষায় গালাগাল দেওয়া, শারীরিক নির্যাতন, নারীদের যৌন হয়রানি মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানিয়েছে।
পরিশেষে উপরোক্ত দাবী আদায়ের জন্য নিম্ন লিখিত কর্মসূচী ঘোষণা করছি।
১। আগামী ২৫ সেপ্টম্বর ২০২৩ইং সোমবার, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীকে স্মারক লিপি প্রদান।
২।স্মারক লিপি সহ দাবী দাওয়া নিয়ে মাননীয় শ্রম মন্ত্রীর সাথে আলোচনা।
৩। ইসতেহার বিতরণ, পোষ্টারিং করা, এবং শান্তিপূর্ণ মিছিল সমাবেশ, মানববন্ধন ইত্যাদি কর্মসূচী ধারাবহিকভাবে অব্যাহত থাকবে। আমরা মালিক পক্ষকে, প্রশাসনকে এই সব বিষয়ে সহযোগীতা করার অনুরোধ জানাই। এ সময় সংগঠনের বিভিন্ন পথ পদবী নেতাকর্মী সহ সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply