অনেক সময় মানবতা রক্তের সম্পর্ককেও ছাড়িয়ে যায়। ঠিক তেমনি এক মহৎ কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন চান্দগাঁও থানায় সদ্য যোগ দেওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈনুর রহমান। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় যেখানে আপন মানুষ দায়িত্ব নিতে ভয় পায় সেখানে সম্পূর্ণ অপরিচিত অসহায় এক ভিক্ষুক মায়ের সদ্য ভুমিষ্ট হওয়া সন্তান সাইফুল্লাহ এর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে মহানবতার পরিচয় দিলেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভিক্ষুক মিনু আক্তারের বাসায় গিয়ে খোঁজ খবর নেন এবং সিএমপি পুলিশ কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর এর পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রী ও নগদ অর্থ প্রদান করেন চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈনুর রহমান।
তবে ভিক্ষুক মিনু আক্তার (২২)। গর্ভাবস্থায় রাস্তায় ভিক্ষা করার সময় হঠাৎ প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছিলেন রাস্তায়। তবে এগিয়ে আসেনি আশপাশের কেউ।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত ছুটে আসে চান্দগাঁও থানা পুলিশের একটি দল। দ্রুত তাঁকে উদ্বার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করায়। তবে এখানেই শেষ নয়। পুলিশ নেন চিকিৎসার ভারও।
গত শুক্রবার (২৭ আগস্ট) নগরের বহদ্দারহাট মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে হাসপাতালে ভর্তির পর নগরের শমসেরপাড়ার বাসায় পালিয়ে চলে আসেন মিনু আক্তার। ৩১ আগস্ট তিনি ওই বাসায় পুত্র সন্তানের জন্ম দেন । সন্তানের নাম রাখা হয়েছে সাইফুল্লাহ।
অন্যদিকে চান্দগাঁও থানা পুলিশ আবারও হাসপাতালে যান মিনুকে দেখতে। কিন্তু হাসপাতালে গিয়ে না পেয়ে ছুটে যান তাঁর বাসায়। সন্তান জন্মের খবরে কাপড় ও খাদ্যসামগ্রী উপহার দেন ওসি। এছাড়া চিকিৎসা ও খাদ্যের ব্যয়ভার বহনেরও দায়িত্ব নেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দরিদ্র মিনু আক্তার বসবাস করেন শমশেরপাড়া এলাকার একটি বস্তিতে। তিনি বহাদ্দারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গর্ভবতী হওয়ার পর স্বামী তাঁকে ফেলে চলে যায়৷
ওসি মঈনুর রহমান বলেন, সন্তান জন্ম দেওয়ার পর ভিক্ষুক মা নিজে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, একই সাথে সদ্য জন্মানো শিশুটিও কিছুটা অসুস্থ। এই অবস্থায় মায়ের পক্ষে সন্তানের দেখভাল কিংবা ভিক্ষা করা কোনটাই সম্ভব না।
ওসি আরও বলেন, খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তাঁর একটি ছেলে সন্তান হয়েছে। এ খবর শুনে মা ও ছেলের জন্য কাপড় ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে বাসায় যায়। সন্তানের নাম রেখেছি সাইফুল্লাহ। তাদের উভয়ের চিকিৎসা ও খাদ্যের ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নিয়েছি। বর্তমানে মা-ছেলে দুজনই সুস্থ আছে৷
তিনি বলেন, আজ সিএমপি পুলিশ কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর স্যারের পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রী ও নগদ অর্থ প্রদান করি এবং স্যারের নির্দেশক্রমে মা ছেলের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়া হয়।
Leave a Reply