শহীদ আবদুর রবের জন্ম ১৯৪৫ সালে গোপালগঞ্জ জেলায় কোটালীপাড়া উপজেলায় বান্ধাবাড়ি গ্রামে। বাবা আবেদ আলী মিয়া, মা রহিমা বেগমের ২য় সন্তান তিনি। বাবা চাকরি করতেন ভারতীয় রেলওয়েতে। ভারত বিভক্তির পর ১৯৪৭ সালে যোগ দেন পাকিস্তান ইস্টার্ন রেলওয়েতে। চাকরির সুবাদে সুুদূর কোটালীপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ি গ্রামের ছেলে শহীদ আবদুর রব ৪ বছর বয়সে বাবার হাত ধরে চট্টগ্রামে আসেন। সে সময়ে প্রাদেশিক রেলওয়ে সদর দপ্তর চট্টগ্রামের পাহাড়ঘেঁষা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ সিআরবিতে বাস করা শুরু করেন। শহীদ আবদুর রবের বাবা অত্যন্ত রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তি হলেও সরকারি চাকরির সুবাদে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তবে সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির ভক্ত ও বিশ্বাসী ছিলেন।
১৯৭১ সালে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন আবদুর রব। মহান মুক্তিযুদ্ধের অংশ নিতে ৮ মার্চ থেকেই অন্যদের সংগঠিত করেন তিনি। ১০ মার্চ চাকসু জিএস আবদুর রব সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালি সদস্যদের অস্ত্র জমা না দেয়ার আহ্বান জানান। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে আগ্রহীদের ভারতে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য পৌঁছে দেয়ার কাজ শুরু করেন আবদুর রব। ৭১’র ১৩ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতগামী একটি প্রশিক্ষণার্থী দলকে জিপে রামগড় পৌঁছে দেয়ার পথে রাউজানের নোয়াপাড়া এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধরা পড়েন রব। তাকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়।
শহীদ আবদুর রবের শিক্ষাজীবন ও রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠা : আবদুর রবের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় নগরীর এনায়েত বাজারের বাটালি রোডের কলিমুল্লাহ প্রাইমারি স্কুলে। প্রাইমারি স্কুল শেষে ১৯০৯ সালে ভর্তি হন সরকারি মুসলিম হাই স্কুলে। স্কুল জীবন থেকেই চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, মিছিল এবং আন্দোলন-সংগ্রামের পরিবেশে কিশোর রবের বেড়ে ওঠা। সেই স্কুলজীবন থেকেই কিশোর রবের মেধা ও রাজনৈতিক মনোভাব ক্রমান্বয়ে প্রভাব বিস্তার করেন। ৫ম শ্রেণি থেকেই বয়স্কাউট আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন আবদুর রব। দক্ষতা, কর্মতৎপরতায় ১৯৬১-৬২ সালে তিনি নির্বাচিত হন শ্রেষ্ঠ স্কাউট।
১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের মাধ্যমে রব রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তখন সবেমাত্র ৮ম শ্রেণির ছাত্র তিনি। ৯ম শ্রেণিতে ছাত্রদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত স্কুল ক্যাপ্টেন। ১৯৬৫ সালে মেট্রিকুলেশনের পর ভর্তি হন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে।
কলেজ জীবনে রবের সাংগঠনিক দক্ষতা-রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বুদ্বিদীপ্ত ও তেজস্বী বক্তৃতা, সাংগঠনিক দক্ষতায় অল্পদিনের মধ্যে তিনি জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠেন। প্রথমে কলেজ ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করেন তিনি। ১৯৬৮ সালে তখনকার আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদিকা আমেনা বেগম ও চট্টগ্রামের নেতা এমএ আজিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় রব কলেজ ছাত্র সংসদের নিবার্চনে সহসভাপতি পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।
আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকায় তখনকার কলেজ অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান রবকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে বি এ ফাইনাল নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য করেন। এরপর রবের বিরুদ্ধে দেয়া হয় একের পর এক মিথ্যা মামলা। ১৯৬৮-১৯৬৯’র গণআন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন রব। ১৯৬৭ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হয়ে সর্বপ্রথম ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করার কাজে নামেন তিনি। রবের তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মিত হয়। ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) প্রথম নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আবদুর রব।
Leave a Reply